পার্বতীপুরে প্রি-পেইড মিটার সংযোগ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ৯:১৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
oplus_2

পার্বতীপুর প্রতিনিধি : 

প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। আকতার হোসেন নেতৃত্বে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা  হয়েছে। জন স্বার্থকে উপেক্ষা করে প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধের পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেছে    ভুক্তভোগী সদস্যরা । দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচিসহ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভুক্তভোগী নেতারা।

রবিবার ২৭ এপ্রিল বেলা ১১.৩০ মিনিট পার্বতীপুরে  উপজেলা  কেন্দ্রীয়  বাস টার্মিনাল গোল চত্বরে মানববন্ধন হয়েছে। ভুক্তভোগী  আহ্বায়ক আকতার হোসেন  পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন পার্বতীপুরে ভুক্তভোগী নেসকো গ্রাহক ও কমিটির আহ্বায়ক মোঃ আকতার হোসেন যুগ্ম আহ্বায়ক ও আজাহার আলী, আশরাফুল আলম আনোয়ার হোসেন মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন রুকনুজ্জামান মফিজুল ইসলাম সদস্য সচিব মোঃ অলিউল ইসলাম সদস্য মোঃ সাইফুল ইসলাম বকুল হোসেন মোঃ আনোয়ার হোসেন মানিক মোঃ সাদেকুল ইসলাম মোঃ আবুল কালাম আজাদ মোঃ আবু বক্কর ছিদ্দিক ও আবু তাহের মানিক প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন পার্বতীপুরে  ভুক্তভোগী নেসকো গ্রাহক কমিটির আহ্বায়কের লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি-নেসকো পার্বতীপুরে বিভিন্ন বাসাবাড়ি, দোকানপাট, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রিপেইড মিটার সংযোগ কার্যক্রম শুরু করবে। অথচ সেবামূলক এই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের আগে নেসকো কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কোনো মতামত গ্রহণ করেনি। তারা জনমতের তোয়াক্কা না করেই একতরফাভাবে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।

প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হলে গ্রাহকদের অতিরিক্ত চার্জ পরিশোধসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিগত ১৫ বছরে এক লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এমনকি বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারের নামে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। সেই দুর্নীতির বোঝা জনগণের ঘাড়ে চাপাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

আকতার হোসেন বলেন, প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে গ্রাহকদের আগাম টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে হবে। যতক্ষণ প্রিপ্রেইড কার্ডে টাকা থাকবে ততক্ষণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে, যা সেবামূলক খাতের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিদ্যুৎ আইন-২০০৩ এর ৫৬নং ধারামতে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে কোম্পানিকে ১৫ দিন পূর্বে নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু এই প্রিপেইড মিটার কার্ডের রিচার্জকৃত টাকা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, যা বিদ্যুৎ আইনের পরিপন্থি। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের হয়রানিমূলক প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধে একটি রিট পিটিশন চলমান রয়েছে, যা নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্বেই নেসকো কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে এই প্রিপেইড মিটার সংযোগের কাজ করবে।

তিনি আরও বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই প্রিপেইড মিটার সংযোগের সিদ্ধান্ত হয়। তৎকালীন সময়ে এই প্রিপেইড মিটার বাণিজ্যের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ছিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ভাই-বন্ধু নামে পরিচিত একটি চক্রের হাতে। সেই চক্রকে আরও প্রায় ১৫ লাখ মিটার সরবরাহের কাজ দিতে সক্রিয় সরকারের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী দুটি কোম্পানি।

আকতার হোসেন বলেন, দরপত্রে এমন শর্ত যুক্ত করা হয়েছে, যাতে ওই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান সুবিধা পায়। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় নেসকোর জন্য ৮ লাখ মিটার কিনতে গত জুলাইয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এখন এই প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ চলবে। বিতর্কিত এই প্রিপেইড মিটার সংযোগের মাধ্যমে গ্রাহকরা মিটার ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বাবদ ৩০% আর্থিক ক্ষতি ও ভোগান্তির শিকার হবেন। প্রিপেইড মিটারে প্রতিবার এক হাজার টাকা রিচার্জে এজেন্ট কমিশন বাবদ ২০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রতিমাসে গ্রাহকদের মিটার ভাড়া বাবদ ৪০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। কতদিন এই ভাড়া পরিশোধ করতে হবে তা অস্পষ্ট। গ্রাহকরা নিজেদের টাকায় ইতিপূর্বে অ্যানালগ ও ডিজিটাল মিটার ক্রয় করলেও তার জন্য কোনো টাকা বিদ্যুৎ বিভাগ পরিশোধ করেনি। প্রতি এক হাজার টাকা রিচার্জে গ্রাহকরা কত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে? বাণিজ্যিক ও আবাসিক রেট কীভাবে নির্ধারিত হবে- এসব নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।

তিনি আরও বলেন, প্রিপেইড মিটারে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে ২০০ টাকা ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের জন্য ৫০ টাকা হারে গ্রাহকদের সুদ পরিশোধ করতে হবে। প্রিপেইড মিটার কোনো কারণে লক হয়ে গেলে লক খোলার জন্য ৬০০ টাকা জমা দিতে হবে। বিদ্যুতের ওভার লোডের কারণে অনেক সময় বিদ্যুৎ প্রবাহ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া এই প্রিপেইড মিটারের রিচার্জ করার সঙ্গে সঙ্গে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এখানে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট না থাকলে রিচার্জ করা যাবে না। কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচ পাম্পগুলো মৌসুমে শুরুতে কৃষকরা বাকিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। ফসল তুলে বিক্রি করে সেই টাকা পরিশোধ করে। বর্তমানে আর এই প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে সেই সুযোগ থাকছে না। পাশাপাশি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করলে বিদ্যুৎ বিভাগের হাজার হাজার কর্মচারীকে পেশা হারিয়ে পথে বসতে হবে। এই প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে কোনো কারণে সার্ভার ডাউন হলে উক্ত সার্ভারের আওতাধীন প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই সার্ভার সচল না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহকরা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকবে। সর্বোপরি এই প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের নতুন করে হয়রানি ও দুর্ভোগে ফেলবে। পার্বতীপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতারা।

এ সময় উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করে হয়রানিমূলক প্রিপেইড মিটার স্থাপন, প্রতি মাসে ডিমার্ন্ড চার্জ, সার্ভিস চার্জ, মিটার ভাড়া আদায়, গণশুনানি ব্যতীত গ্রাহকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বন্ধ করে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা, বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং ঘুষ-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করে বিদ্যুৎ বিভাগকে সত্যিকার অর্থেই একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়।
এ সময় আগামী ১৫ দিন পার্বতীপুরে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা করাসহ জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানানো হয়। উত্থাপিত দাবি আদায় না হলে এরপর কঠোর কর্মসূচিসহ আগামী দিনে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন ভুক্তভোগী   সদস্য কমিটির নেতারা