ফেলানী হত্যার ১৪ বছর : ‘মার্চ ফর ফেলানী’ পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়ন চায় মানবকথা মানবকথা প্রকাশিত: ৫:১৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২৫ মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৪ বছরেও ন্যায় বিচার পায়নি তার পরিবার। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবা নুর ইসলামের সাথে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরছিলেন ফেলানী। এসময় মই বেয়ে কাঁটাতার পেরোনোর সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত হয় ফেলানী। বাবা নুর ইসলাম প্রাণে বেঁচে গেলেও মেয়ে ফেলানীর মরদেহ দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকে কাঁটাতারে। পরে এ নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠলে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতে ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সদর দফতরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যকে নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেয় নিজ বাহিনীর আদালত। ফেলানীর বাবা-মা রায় প্রত্যাখ্যান করলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচার কার্যক্রম শুরু করে ভারত। পরের বছর ২ জুলাই অভিযুক্তকে আবারও নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়। এরপর ফেলানী হত্যার ন্যায় বিচারের আশায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টে যৌথভাবে রিট আবেদন করেন ফেলানীর বাবা ও মানবাধিকার সংগঠন সুরক্ষা মঞ্চ। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত পূর্ণাঙ্গ ব্রেঞ্চ রিট আবেদনটি গ্রহণ করলেও একাধিকবার শুনানীর তারিখ পরিবর্তন হওয়ায় এখনও ন্যায় বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার। ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ অনেকের কাছে আমারা গিয়েছি, কিন্তু ন্যায় বিচার পেলাম না। বাবা নুর ইসলাম বলেন, দুই দুই বার কুচবিহারে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের নৃশংসতার বর্ননা দিয়েছি। তারপরও ন্যায্য বিচার পাইনি। তবে ভারতের সুপ্রীম কোর্টে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা ছাড়িনি। ফেলানী হত্যাকান্ডে পিতা নুর ইসরামের আইন সহায়তাকারী কুড়িগ্রাম পাবলিক প্রসিকিউটর এস এম আব্রাহাম লিংকন জানান, একাধিকবার তারিখ বদলের পর ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট শুনানীর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। ভারতরে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি এন ভি রামানা ও বিচারপতি মোহন এম সান্তনা গৌদ্ধারকে নিয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চে শুনানীর জন্য আইটেম নম্বর-৩ হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। অথচ সুপ্রীম র্কোট থেকে বিবাদীকে শোকজ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা শোকজের জবাব দিয়েছেন। কিন্তু পরর্বতীতে আর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি। বর্তমানে কার্য তালিকা থেকে বাদ পড়ে আছে রিটটি। করোনার কারণে রিটটির সর্বশেষ অবস্থা জানেন না তিনি। এডভোকেট আব্রাহাম লিংকন ন্যায্য বিচারের আশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘জেনারেল সিকিউিরিটি ফোর্স কোর্টে বাদী ছিল বিএসএফ, আসামি ছিল বিএসএফ এবং বিচারকও ছিল বিএসএফ। ফলে ন্যায্য বিচার পাওয়া যায়নি। সুপ্রীম কোর্টে ন্যায্য বিচার পাওয়া যাবে। আর এই রিট নিস্পত্তি করতে সুপ্রীম কোর্ট যে পর্যবেক্ষণ দিবেন তাতে দু-দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে প্রত্যাশা করছি।’ ফেলানীর পিতা নুর ইসলাম পরিবার নিয়ে ভারতে থাকতেন এবং সেখানে ইট ভাটায় কাজ করতেন। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর রামখানার কলোনীটারী গ্রামে মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয়েঠিল। তাই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরতে ২০১১সালরে ৬ জানুয়ারী মেয়েকে নিয়ে রওনা হন বাংলাদেশে। ৭ জানুয়ারি এ হত্যাকান্ড ঘটে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে-২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ও নির্যাতনে অন্তত ৬০৭ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া অধিকার নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার মতে- ২০০৯ থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিএসএফ সদস্যদের হাতে অন্তত ৫৮২ বাংলাদেশি নিহত এবং ৭৬১ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কুড়িগ্রামের অনন্তপুর-দিনহাটা সীমান্তের খিতাবেরকুঠি এলাকায় ০৭ জানুয়ারী ২০১১ সালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ-এর সদস্যরা ফেলানী খাতুন নামের এক কিশোরীকে গুলি করে হত্যা করে। তার জন্ম: ১৯৯৬ সালে বলে জানা গেছে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার রামখানা সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা বন্ধের দাবীতে ‘মার্চ ফর ফেলানী’ পদযাত্রা বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কুড়িগ্রামের কলেজ মোড়স্ত বিজয়স্তম্ভ থেকে শুরু হয়ে ফেলানীর কবর জেয়ারত ও দোয়া মাহফিলের সফলভাবে শেষ হয়। ‘মার্চ ফর ফেলানী’ পথযাত্রায় পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে বক্তব্য রাখেন কুড়িগ্রাম জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আবদুল মতিন ফারুকী এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ভোগডাঙ্গা বাজার এবং মধ্যকুমরসহ কয়েকটি স্থানে পথসভায় বক্তব্য রাখেন সারজিস আলম- মুখ্য সংগঠক, ড আতিক মুজাহিদ, যুগ্ন আহবায়ক আবু সাইদ লিওন, কেন্দ্রীয় সংগঠক সাকিব মাহদী, সংগঠক কেন্দ্রীয় এ এস সুজা উদ্দিন, কেন্দ্রীয় সদস্য গোলাম মর্তুজা সেলিম, কেন্দ্রীয় সদস্য কৈলাশ চদ্র রবিদাস, কেন্দ্রীয় সদস্য মোশফিকুর রহমান জোহানসহ জেলা এবং উপজেলা নেতৃবৃন্দ। ‘মার্চ ফর ফেলানী’ পদযাত্রায় ৫ দফা দাবীর মধ্যে আছে, ১। সীমান্ত হত্যা বন্ধ, ফেলানীসহ সীমান্তের সব হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সম্পন্ন করা, ২। শহীদ ফেলানীর নামে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের নামকরণ করা, ৩। সীমান্তে সব ধরনের মরণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধে চীনের মতো চুক্তি, ৪। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বাতিল করে সাম্য ন্যায্যতা ও পারস্পরিক মর্যাদার ভিত্তিতে নতুন পররাষ্ট্রনীতি গঠন, ৫। প্রান্তিক জেলা কুড়িগ্রামের দরিদ্রতা নিরসনে নদী সংস্কার ও চরের জীবন–জীবিকা উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত হত্যা বন্ধে বহুবার উভয় দেশের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে বৈঠক করেছেন এবং বিএসএফ ততোবারই ওয়াদা দিয়েছিলেন আর গুলি চালানো হবেনা, কিন্তু তারা সেই ওয়াদা রাখেননি কখনো। তারই ফলশ্রুতিতে আজ বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা কামী মানুষজন ‘মার্চ ফর ফেলানী’ ৫ দফা দাবীর বাস্তবায়ন চায়। SHARES বিশেষ প্রতিবেদন বিষয়: